দু'টি পলাতক আত্মা
(জেবুন্নেছা)
রাতের নির্জনতা ছাপিয়ে আর্তনাদ করছে শুকনো পাতারা লীনার পায়ের নীচে।
লীনা যেন জোছনার বাড়ি যেতে চায়! ঘরময় অমাবশ্যা! সহস্র যুগ আগে নিভে গেছে
স্বপ্নের প্রদীপ। তাই লীনার আঁচলে শুকনো পাতারা বিদ্রোহ করে। পায়ের নীচে আর্তনাদে
আত্মহুতি দেয়।
কবরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে লীনা। হাসনা হেনার ঘ্রাণ যুবতী হয় চন্দ্রিমা
পূর্ণতায়। কবরের পাশে বসে পরে লীনা। চোখ বন্ধ করে আত্মার স্পর্শ নেয়।
নিস্তব্ধতার পরম স্নেহে
আত্মায় সুখ শিহরণ ছড়িয়ে পড়ছে।যবনিকার খবর পেয়ে
মেঘেরা ভিজিয়ে দেয় চোখ, ঠোঁট। ভেজা গোলাপের সৌন্দর্যে ফেরেশতা ফিরে আসে
কষ্ট -আত্মা তুলে নিতে। লীনা চোখ বন্ধ করে। পাল্টে যাচ্ছে সময়ের ঘড়ি। লীনা
হারিয়ে যাচ্ছে পাঁচ বছর আগের দুষ্ট চেহারার সরলতায়।
চঞ্চলা লীনা
হাসতে হাসতে ডানপিটে শাওনের হাতে ধরা পরে। মিষ্টি খুনসুঁটিতে ভর করে সময়,
জীবনের হাত ধরে নিয়ে চলে অমরালোকে। শাওন নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসে লীনাকে।
সবাই শাওনকে অপছন্দ করলেও লীনাকে পেয়েই ধন্য শাওন। শাওন জানে লীনা অনন্যা।
যেমনি মেধাবী তেমনি ভদ্র। তবু ও পাগলের মতো ভালবাসে শাওনকে। আত্মীয়তার
কারণে প্রায়ই দেখা হওয়ার সুযোগ। কিন্তু এরপরও সকাল বিকাল মেসেজ, প্রতিদিন
একটি চিঠি না পাঠালে দুজনেই পাগলামী করতো। এমনি করেই ভাললাগায় সুখ বাস করে
কয়েক বছর।
একদিন লীনা বাড়ি ফিরে দেখে মা ভীষণ রেগে। জানতে চাইলে শ
'খানেক চিঠি এনে হাতে দিয়ে বলে এগুলি কী? সর্বনাশ! লীনা ধরা পড়েছে মায়ের
হাতে। নির্বাক হয়ে মায়ের
বকুনি হজম করে। রাতে অনেক কষ্টে মা 'কে খাবার খেতে রাজি করে।
দ্রুত পাল্টে যায় পরিচিত পৃথিবী। কলেজে যাওয়া বন্ধ। যোগাযোগ বন্ধ।বদলে
গেছে চাঁদনী রাতেরা। এক উঠোনে বসে ফাগুনের জোছনায় গান খেলার ছলের আপন
অনুভবেরা হঠাৎ করে থমকে যায়। লীনার ফুফুর বাড়িতে ও খবর যায়।আপনজনেরা হঠাৎ
করে সবাই মীরজাফর হয়ে উঠে। শাওনের অনেক চেষ্টা শুধু বৃথা হয়েই যায়। প্রায়ই
৩-৪ মাস দু 'টি আত্মা নিষ্টুর সময়ের কাছে বন্দি হয়ে অসহায় ! লীনার জন্মদিনে
বাড়ির সবাইকে অমান্য করে চলে আসে লীনার বাড়িতে। চিরপ্রিয় মামার বাড়ির দরজা
বন্ধ হয়ে যায় শাওনের মুখের উপর। শাওন সহ্য করতে পারা না। লীনার মিষ্টি
মুখখানা কতকাল দেখেনা! দরজায় পুরো দিন দাঁড়িয়ে থাকে। শেষে জানালার কাঁচ
ভেঙ্গে নিজের হাত কাটে
শাওন। দরজায়- বারান্দায় শুধু লীনার নামটি লিখতে
থাকে। লীনা মায়ের পা ধরে অনেক কাঁদে। তবু বের হতে পারেনা। অফিস থেকে ফিরে
শাওনের মামা দেখে শাওন জ্ঞানশূণ্য পড়ে আছে। হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
কিন্তু পরের দিন জ্ঞান ফেরার পরই পালায় শাওন হাসপাতাল থেকে। খবর নিয় চলে
যায় লীনার কলেজে। সেদিন লীনার ফরম ফিলআপের শেষ দিন। তাই কলেজে গিয়েছিল
লীনা। শাওন এসে সামনে দাঁড়ায়। "লীনা "! লীনা চমকে উঠে। লীনার ইচ্ছে করে
জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। বলতে ইচ্ছে করে চিৎকার করে _'আমি তোমায় ছাড়া ভালো নেই
শাওন '।লীনা দৌড়ে যেতে চায় শাওনের কাছে। মা 'কে মনে পড়ে। থমকে যায় লীনা।
লীনা বলে 'তুমি চলে যাও শাওন, আমায় আর বিরক্ত করোনা। কী আছে তোমার? না
ডিগ্রী, না চাকরি । কেনো আমার জীবনটা নষ্ট করতে চাও? ' শাওন বলে 'সব হবে
লীনা। তুমি শুধু বলো তুমি আমার। আর আমি জানি এসব তোমার নিজের কথা নয়। '
লীনা বলে 'আমার নিজের কথা। আর আমায় যদি ভালবাসো তাহলে আমার সামনে আর কখনই
দাঁড়াবেনা। ' বলেই দৌড়ে চলে যায় লীনা, অশ্রু লুকাতে।শাওন রাস্তায় নেমে আসে।
অনেক কাজ ডিগ্রী -চাকরী! লীনা যুগে যুগে শুধুই শাওনের।
লীনা বাড়ি ঢুকে
নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কাঁদলেই যেনো শুধু মুক্তি।
স্বর্গপ্রেমে কী দেবতারই নজর লাগলো? নিষ্পাপ দু 'টি আত্মার স্বপ্ন কেনো
ইন্দ্রদেবী চুরি করে নিলো? পবিত্র ভালবাসায় নাকি ঈশ্বরও খুশি। তবে কী
ইবলিশের প্ররোচনা ? লীনা তো কখনো কারো ক্ষতি করেনি! খেলার সাথীকে কখন যে
জীবন সাথী ভাবতে শুরু করেছে লীনার মনে পড়েনা হাসি খেলায় কখন যে ওরা বড় হয়ে
গেছে নিজেরা জানেনি। লীনা চিৎকার করে কাঁদে। ইচ্ছে করছে নিজেকে ক্ষত বিক্ষত
করে ফেলতে। কষ্টেরা কাঁচি দিয়ে কলিজা কেটে চলছে।নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনা
লীনা। আর নিজের মায়ের লাশের উপর দিয়ে বেনারসি পড়ে যাবে, তাও অসম্ভব। লীনা
অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিন দিন পর দরজা ভেঙ্গে বের করা হয় লীনাকে। গা পুড়ে
যাচ্ছে। জ্ঞান নেই। ডাক্তার আসে। জ্বর কমে। কিন্তু খাবার মুখে তুলেনা লীনা।
বলে -'প্লিজ মা আমায় একটু একা থাকতে দাও। আমি তোমাদের কথা একদন্ডও অমান্য
করবোনা। ' ফুফুর বাড়ি থেকে কল আসে।সবাই আলোচনা করে ঠিক করে বিয়ে হলে সব ঠিক
হয়ে যাবে। এমনই তো হয়।
লীনার বিয়ে হয়ে যায়। শাওন জানতেও পারেনা তার
শখের পুতুলবউ অন্য পালকীতে চড়ে ভালবাসা ছেড়ে যাচ্ছে জীবনের পথে। মায়ের
লাশের কথা মনে পড়তেই চুপ করে সব মেনে নেয় লীনা। ভালবাসার কবর রচনা করে মা
'কে জীবন দিতে। মায়ের ও কষ্ট হয় লীনার চোখের দিকে তাকাতে। তবুও ভালো।
আত্মীয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরলো না। ননদের অমন কুলাঙ্গার ছেলের কাছ থেকে
মেয়েটাকে বাঁচানো গেল। নিজ সন্তানকে ইমোশনালী ব্লেকমেইল করে ও মা তৃপ্ত
হলেন।
লীনার অস্তিত্বে শুধু শাওন স্বপ্ন। বাসর নামী চাহিদার মন্ডপে
স্বামী নামের মদ্যপ ধর্ষকের হাতে ধর্ষিত হলো ভালোবাসা। প্রাণ হারালো লীনা
অস্তিত্ব! লীনার পৃথিবীতে আর কখনো সকাল হলোনা। আর কখনো পাখিরা ঘুম ভাঙ্গালো
না। ফুলেরা আর কোনো রং পেলোনা। চঞ্চল হাসিকে গলা টিপে হত্যা করলো নেশাখোর
পিশাচের রক্তের তৃষ্ণা। লীনা এভাবেই বেঁচে যাচ্ছিল মৃত্যুকে বুকে নিয়ে।
কিন্তু বিধির নাটকে অন্য কিছু হাইলাইটস ছিল। নেশাখোর পিশাচটি পৃথিবী ছেড়ে
গেল বিয়ের বছর খানিকের মধ্যেই। লীনা ফিরে এলো। সেই বাগান, সেই বারান্দা।
এখনও যেনো স্মৃতির রক্তের ছোপ লেগে আছে! দরজায় হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল লীনা।
শব্দ হওয়ার আগেই অর্ভ্যথনা করলো প্রিয় পৃথিবীর নিষ্টুর আন্তরিকতা।
সময়ের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে লীনা। ফুফাতো বোনের বিয়ে। সবার চাপাচাপিতে
আবার সেই ফুফুর বাড়ি। পরিচিত পথ। প্রিয় সর্ষে ক্ষেত। সেই চিরচেনা
পুকুরপাড়। ভাবতে ভাবতে আর পারেনা। পৌঁছেই অসুস্থ হয়ে পরে লীনা।
সাঁঝে
ঘুম ভাঙ্গলো কপালে কাঙ্খিত স্পর্শ পেয়ে। চোখ খুলে দেখতে ইচ্ছে করে
দেবরাজকে। কেমন আছে সে! কেমন ছিল! ভয়ে চোখ খুলেনা লীনা। যদি ভুল হয়! একটি
কথা শুধু! 'উঠে পড়ো '- যেনো অনুভবের মোহেরা কানে প্রবেশ করে সারা শরীরে
কাঁপন ধরিয়ে দেয়। তবু চোখ খুলেনা লীনা। আবার সেই কণ্ঠ! সবাই গাঁয়ে হলুদের
জন্য ক্লাবে যাচ্ছে । তুমি তৈরি হয়ে এসো তাড়াতাড়ি। চোখ খুলে তাকায় শাওনের
চোখে। বলে -
কেমন আছো? শাওন অন্য দিকে তাকায়। বলে অনেক ভালো। তোমার
জন্য ডিগ্রী -চাকরী আনতে গিয়েছিলাম। পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না
একবছর। যেদিন ফিরলাম, সেদিনই নাকি তুমিও ফিরেছিলে। তবু তো ফিরলে। তুমি
জানোনা লীনা! তোমার জন্ম হয়েছে শুধু আমার জন্যে। লীনার ইচ্ছে করলো কপালে
রাখা শাওনের হাতটা বুকে চেপে হৃদপিন্ডের শব্দ শুনাতে। ইচ্ছে করলো বলতে আমি
শুধু তোমাকেই ভালবেসেছি।
কিন্তু জীবন ইচ্ছেগুলিকে অনেক আগেই দাফন
করেছে। উঠে বসে লীনা। বলে এ ঘরে আসা তোমার উচিত হয়নি। বলতে বলতে শাওনকে
দেখছিল লীনা। পাগল পাগল সেই শাওন কোথায়? লীনা কী নিজ হাতে খুন করেছে? এই
শাওন কেমন যেনো অচেনা। কিন্তু শ্রদ্ধা হয় লীনার। পরিপূর্ণ এক পুরুষ। শান্ত,
বুদ্ধিদীপ্ত চোখ প্রশান্ত মুখচ্ছবি মুগ্ধ হয়ে দেখে লীনা। শাওন লীনাকে বলে
দেখো আমি আসিনি, মামী বললো তাই! ঘৃণায় চোখ কুচকে আসে লীনার। কার উপর
জানেনা লীনা। মা! না, মা হয়তো ভেবেছে সময়ের বদলে ভুলেরা হয়তো পথ হারিয়েছে।
শাওন আবার বলে আজই হয়তো শেষ দেখা। আমি একটা চাকরী পেয়েছি । কাল যোগদানের
শেষ সময়। যদিও অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও বাড়ি ফিরিনি। তুমি ছিলেনা বলেই হয়তো
খোদা আমায়ও বাড়ি আসতে দেননি। জানো লীনা কত বেলা খাবার খাইনি। পরে অনেক
কষ্টে একটা টিউশান জুটে যায়। শেষ সময়। তবু যে বাড়িতে টিউশান সে বাড়ির
ভদ্রলোক দয়া করে আমায় পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। আমার চাকরিটা উনার
দান। হয়তো তোমায় আর কখনো জ্বালাবো না কারণ তুমি চাওনা। কথা শেষ না করেই
লীনার চোখে তাকায় শাওন। লীনার ভেতরটা আর্তনাদ করছিল। শাওন কী যেনো পড়লো
লীনার চোখে। বেরিয়ে যেতে পা বাড়িয়ে আবার ফিরে তাকায়। দুষ্টু হেসে বলে
-পালাবে আমার সাথে? লীনা হাসে। বলে -বেকার একটা! যাও আগে যোগদান করো!তারপর
না হয় পালাবো! লীনা জানে। এ নিছক দুষ্টুমি! তবু এই মূল্যহীন কথায় প্রাণহীন
লীনা ঝর্ণার মতো গতিময় হয়ে উঠে। দু 'জনেই হেসে উঠে।
লীনা বিয়েতে
-হলুদে পরার জন্য সাদার উপর বড় পাড়ের শাড়ী এনেছিল। কিন্তু এখন ওসব পরতে ভাল
লাগছে না। ফুফুর কাছে বলে সব শাড়ী জার্নিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ফুফু বলে তোর
বোনের ড্রয়ারে দেখ পছন্দ হয় কিনা! লীনা বাছাই করে একটি হলুদ জামা নেয়।নেয়ার
সময় হাতে উঠে আসে লাল -খয়েরি জামার ওড়না! মনে পড়ে শাওন বলেছিল - লাল
-খয়েরিতে তোমায় অসাধারণ লাগে। ভুলে যেতে চায়। তবুও লাল -খয়েরি জামাটিই
তুলে নেয় নিজের অজান্তে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হয় লীনা। কেনো সে এমন
করছে নিজেকে প্রশ্ন করে। কিন্তু নিরুত্তর লীনা লজ্জিত হাসে শুধু। হেরে
যাচ্ছে কঠোর লীনা। আয়নায় দেখছিল শাওনের লীনাকে।চোখে কাজল, শাওনের প্রিয়
কালো টিপ, ঠোঁটে হালকা লিপগ্লস। কিন্তু রুম থেকে বের হতে পারছেনা। লজ্জার
শিকলে পা যেনো বেঁধে রাখা। শাওন এলো। বললো - আমার ভাগ্য ভালো যে তোমায় নিয়ে
পালাইনি। আমার তো না খেয়েই থাকতে হতো। লীনা বললো -কেনো? শাওন হাসতে হাসতে
বলে রাঁধতে কখন এতোটা সময় সাঁজলে? লীনাকে দেখে নির্বাক হলো শাওন। এক ঘন্টা
আগের কঠিন সেই লীনা কোথায়? চোখের দিকে তাকিয়ে বললো তুমি একটুও বদলাওনি।
শুধু অভিনয় করছিলে নিজের সাথে। "কালো টিপ " লাল -খয়েরি জামা " কেনো পড়লে?
লীনা স্বাভাবিকতার ভান করে বলে আর টিপ ছিলনা, তাই _। আচ্ছা তুমি যাও আমি
চেইঞ্জ করে আসছি। শাওন অবাক হয়ে বলে তুমি ভুলে গেছো? লীনা না বুঝার ভান
করে। -কী? শাওন বলে পরে বলবো এখন চলো। গাড়িতে সবাই বিরক্ত হচ্ছে।
হলুদের রাত। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। লীনা শাওনকে। দেখার সময় নেই কারো। লীনাও
ব্যস্ত ছিল। শাওন বললো এদিকে কাউকে তো পাচ্ছি না। আমার চোখে কী পরেছে একটু
দেখবে? লীনা জানে শাওনের এ মিথ্যে শুধু লীনাকে নিজে্ কাছে নেয়ার জন্য।
তবু লীনা যায়। বলো -কী বলবে? শাওন বলে তুমি জানো -আমি মিথ্যে বলেছি! লীনা
মাথা নেড়ে স্বীকার করে। তবে এলে যে! জানিনা কেনো এসেছি। লীনা আর শাওন
ক্লাবের ছাঁদে বসেই বেড়ায় সর্ষে ক্ষেতে, পুকুরপাড়ে। অনেক অভিমান, অনেক রাগ
সব জয় করে দু 'টি প্রাণ মিশে গেছে কথার ফুলঝুড়িতে। কত শত কথা যেনো যুগ যুগ
ধরে জমেছিল। কথায় কথায় সকাল হলো। পাখিরা বহুযুগ পরে গেয়ে উঠলো। ফুলেরা
রং পেলো। কিন্তু আজই শাওনের যেতে হবে সোনার হরিণটির জন্য।
সুখের
বাতাসে লীনা ভেসে বেড়াচ্ছিল। শাওন যোগদান করলো। ছুটি পেলো। বাড়ি এলো। মামার
বাড়ি মিষ্টি নিয়ে গেলো। লীনার মা নিজ হাতে যত্ন করে রেঁধে খাওয়ালেন
শাওনকে। বিকেলে শাওন লীনা নদী পাড়ে, ব্রিজে, সবুজ দ্বীপে অনেক বেড়ালো।
কোথাও যেনো কিছুই হয়নি।
দুঃস্বপ্নেরা যেনো বিদায় নিয়েছে রাত্রিশেষের
আগেই ! প্রায়ই আসে ছুটি নিয়ে শাওন। এখন মনে হয় সবাই ভীষণ আপন। ফুপী ও
বুঝেছে ওরা কী চায়! মায়ের তো কথাই নাই। সুখে লীনা ভাবছিল তার গ্রহদোষ শেষ।
এখন শাওন প্রতি মূহুর্তে খবর রাখে লীনার। দু 'টি আত্মা সকল নিয়মের উর্ধ্বে
উঠে সুন্দর একটি স্বপ্নে বিভোর হয়।
সেদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল শাওন।
তবে এবার অন্য ছুটি। লীনা চিরদিনের জন্য শাওনের হবে। লীনাকে আর কখনো
হারাতে দিবেনা। লীনার চোখে ও ঘুম নেই। কতবার যে ভেবেছে শাওনের পাগল করা চোখ
দুটিতে আদর করে দেবে। ভালবাসার অনুভবে শাওনের বুকে মাথা রেখে স্পন্দনে
স্পন্দনে নিজের নাম শুনবে।
লীনার ছবি দেখছিল শাওনগাড়িতে। এই মিষ্টি
মেয়েটি একদিন পরই তার ঘরে আসবে লাল -খয়েরি কাতান পড়ে। অনেক সুুন্দর !
কীভাবে ছুঁয়ে দিবে তার চোখ? হঠাৎ _____
লীনা মোবাইলের দিকে ফিরে
শুয়ে আছে -যেনো জীবনের শ্রেষ্ঠ বার্তাটি আজই আসবে। কল এলো। লীনা -'হ্যালো
তুমি কোথায়? কতদূর? খেয় উঠেছো তো? বাড়ি পৌঁছতে আর কতক্ষণ লাগবে? ফুপীরা
কাল কয়টায় রওনা দেবে? দ্যাখো! দূরের রাস্তা! পানির বোতল ভুলোনা। স্যালাইন
রেখো কিন্তু। আর শুনো _____'। ওপাশ থেকে - আপনি এই মোবাইল মালিকের কী
ওয়াইফ? লীনা অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বললো ও কোথায়? ও কে দিন! ওপাশ থেকে -তিনি
মারা গেছেন। আইডি, ব্যাগ, টাকার ব্যাগ কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না পরে এই
মোবাইলটি তাঁর হাতে পাওয়া যায়। ঠিকানা দিচ্ছি। লাশ নিয়ে যান।
স্তব্ধ হয়
লীনা। এমন তো কথা ছিলনা। মেসেজ দেয় ঠিকানা সহ ফুপীকে।লীনাকে স্বাভাবিক
দেখে লীনার মা ভয় পায়। ফুপীর বাড়িতে নিতে চায়না লীনাকে। কিন্তু লীনার
অনুরোধে অবশেষে রাজি হয়। লাল -খয়েরি জামা, কলো টিপ পড়ে নেয় খেয়াল করে।
নাহলে শাওন অভিমান করে বলবে তুমি আমায় ভালোবাসোনা। লীনা জানে পৃথিবী তাকে
শাওন দেয়নি।
সবাই যখন শাওনকে কবরে একা রেখে গেছে তখন সাবধানে নুপুর
জোড়া খুলে বের হয় লীনা। আঁধারে পালিয়ে যাবে আজ শাওনের হাত ধরে। শুকনো
পাতার আত্মহুতিতে আজ বিচলিত নয় লীনা। কবর ছুঁয়ে দেখে লীনা। সবটুকু বিষ
সযতনে গলায় ঢালে। বিস্বাদে আনন্দিত হয় কষ্টকাব্যেরা। মেঘের করুণায় শাওনের
ঝাপটায় লীনার চোখ মুখ দ্যুতি ছড়াচ্ছিল। লীনা মিষ্টি হেসে বলে আমি পালিয়ে
এসেছি জান, শুধু তোমার জন্য। তারপর মাথাটি শাওনের বুকে রেখে দেহকে মুক্ত
দিল। চিরসাথী হলো দু 'টি পলাতক আত্মা।।