কুড়ি দৃষ্টির ঘৃন্য অবজ্ঞা
কচি কন্ঠের কর্কশ আকুল উচচারণ,
“আফা দুইডা ট্যাকা দেন।”
প্রতিক্ষিত সবুজ বাতির দৃষ্টি
ফিরিয়ে তাকালাম পাশে,
কুচকুচে এক কঙ্কাল দাড়িয়ে
সি এন জির কাছে।
অপলক দৃষ্টিতে আবিষ্কার করছি
ক’টা হাড় দৃশ্যমান!
“আফা দিবেন?” সম্বিৎ ফিরে
পেলাম।
ব্যাগ হাতরে ১ টি বিশ টাকা বের করতেই-
ব্যাগ হাতরে ১ টি বিশ টাকা বের করতেই-
সি এন জি ড্রাইভারের ধমক
খেলাম।
আপা দিয়েন না, এরা মিথ্যে
বলেই টাকা কামাই করে,
অবাক আমি।
একটু আগেই এই সি এন জির ড্রাইভার,
বলেছিল, উত্তর বাড্ডা গেলে
আড়াইশ টাকায় পোসাবেনা তার।
“ট্রাফিক জিজ্ঞেস করলে কিন্তু
মিটারে যাচ্ছেন বলতে হবে আপনার।”
দিব্যমান মিথ্যেকে প্রতিবাদ
না করে কচিমুখটিতে মন দিলাম।
চামড়ার উপর হাড়ের দখনিতে
আর জিঘাংসু দৃষ্টিতে-
মানচিত্র চিবানোর ক্ষুধা
দেখলাম!
হাত বাড়াতেই ছো মেড়ে নিল
বিশটি টাকা।
বললাম একটু দাঁড়াও।
তুমি কোথায় থাক? তোমার বাবা-মা
নেই?
কচি মুখের মর্মবাণী-
“বাপ কৈ কেডায় জানে,
মা গেলে বছর মইর্যা বাঁচছে
জানে।”
হাস্যকর জেনেও বললাম, তুমি
পড়না?
“আফা এত্তো প্যাচাল পাইড়েন
না।”
ছয় বছরে ময়লা জামার কুড়িমুখটি
যেন অবজ্ঞা উপেক্ষায়-
দেখিয়ে দিল অবস্থানটি আমার!
তার চোখে পড়লাম-ঘৃন্য আমাকে,
মেখে নষ্টরেণু সমাজের!
তবু শেষ বার বললাম, যাবে
সাথে আমার?
“মাফ করেন আফা, বহুত পিডা
খাইছি,
অহন রাস্তাত থাইক্যা শক্ত
হইয়্যা গেছি।”
“একদিন আমিও পিডা দিমু ,
আফনেগো যত ভদরের মুখে আগুন
জ্বালামু।”
সবুজ বাতি জ্বলে উঠল, ভদ্রতার
মুখোশ বাঁচাতে।
যেন এমনি করে চায় ভদ্রনামি
সমাজ সার্থ সিদ্ধিতে।
নীতি কথা উপহাসিত পথকুড়ির
চোখের ভাষায়!
অবজ্ঞায় মনুষ্য প্রেমের লাশ
সমাধিত ফার্মগেটের পিচঢালায়!
ছ’বছরের নির্বাক দৃষ্টি দেখেছে,
সমাজের যত নগ্নতা!
বেঁচেথাকার উদ্দেশ্য, তাই
এখন তার নিষ্ঠুরতা!
বেঁচে থাকা যার একটি বিশাল
প্রশ্ন,
সমাজ কী দেবে তার উত্তর?
পথকুড়ি কী জানবে মনুষ্যত্ব
দাঁড়িয়ে আছে-
স্নেহ মমতা ভালোবাসা নিয়ে,
নাকি কচিকুড়ি ঝড়ে যাবে-
কখনো পথে জীবন দিয়ে!