Thursday, September 28, 2017

"মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দু'কলম লেখার লোভ সামলাতে পারলামনা।"
মহান মা তুমি
জেবুন্নেসা সিমী

আমি শুনেছি বিশ্বের মহৎ অযুত কথা,
দেখেছি স্বচক্ষে মহান যে জন শ্রেষ্ঠত্ব মানবতা।

সকল মহানুভবতার শীর্ষে যে মন
দুঃখীনীদের মা জননী, সর্বহারার বাঁচার স্বপন।


বাংলার সোনালি সুর হাসবে তোমার নামে,
মানচিত্রে যতোকাল দেশ থাকবে।
তোমার স্নিগ্ধ মুখের নির্মল হাসি শ্যামলীমায়
সবুজের মহানুভবতার কথা বলবে।

সকল বীরাঙ্গনার পিতা হওয়ার
মহত্ব রাখেন যে পিতা
সে জনকের যোগ্য কন্যার সম্মান 
তোমার, দৃষ্টান্তে মানবতা।

নোবেল বা বিশ্বজয়ের সম্মান বিশ্ব দিক না দিক,
মহত্বে তুমি আমার বিশ্বজয়ী মুকুট বাংলার।
দশ লক্ষ প্রাণে জীবন দেয়ার কথা 
আছে ইতিহাসে কার?
পতাকার সম্মান রক্ষার দীপ্ত সূর্য তুমি বাংলার।

মমতাময়ী মা আমার,
শতবর্ষ আজ ইতিহাস হতে চায়
চরণচুমে তোমার।
মায়ের মতন বুক পেতে নিয়েছো 
দশ লক্ষ নির্যাতিত সন্তান,
তোমার মনুষ্যত্বে বাঁচে আজ
আমার জনকের সম্মান।
যতোকাল পতাকা উড়ে বলবে 
বিজয়ের কথা,
বিশ্বে চির অম্লান রবে
তোমার মহানুভবতা।

[শুভ জন্মদিন প্রিয় নেত্রী। আপনার সুস্থ সুন্দর দীর্ঘায়ু কামনায় আমার এ ছোট উপহার।]


Friday, September 22, 2017

শুভ্র বসনে মহাজ্ঞানী 
 জেবুন্নেসা সিমী

পৃথিবীর বুকে যেদিন পোড়া কষ্ট; 
প্রকৃতি হবে তৃষার্ত!

সেদিন পথের ধুলোরাও বিদ্রোহ করবে। 
ওজনহীন কেউ কেউ পবনের ব্যানারে
মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে অস্তিত্ব হারাবে। 

অতঃপর! 
শোকে কেঁদে উঠবে আকাশের বিশালতা।
মেঘেদের কাছে চাইবে অশ্রুভিক্ষা। 
মেঘেরা  আপ্লুত হয়ে 
আশ্রিতের দখল ছেড়ে যাবে
অশ্রুবারিতে। 

ধন্য হবে মেঘ! 
কখনও জানবেনা  মায়া কান্না
ছলনার আবৃত্তি। 

আবার আকাশ নিষ্পাপ।
পৃথিবীর যতো কলঙ্ক,
পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়ে 
শুভ্র বসনে মহাজ্ঞানী। 

রাতেরা যদি ফিরে আসে
জড়িয়ে দেবে আঁধারের শামিয়ানা, 
মাঝে কিছু আলোর ফুল।

ধন্য হবে রাত!
কখনও জানবেনা এ ভালোবাসার 
বিশালতা কত!

শ্বাসরুদ্ধ জবান
জেবুন্নেসা সিমী

যে দিনটির;পাথরের চাপে
শ্বাসরুদ্ধ সময়,
সে দিনটি মানুষের নয়।
শ্বাসরুদ্ধ প্রাণ ক'দিন বেঁচে রয়!
যে নদী রক্তে টলটল,
সে নদী পৃথিবীর নয়।
মানুষের গ্রহে রক্তনদী কেমনে হয়?
রক্তের বন্যায় যখন মনিটর ঝাপসা,
অশ্রু মুছে দেয় কি-বোর্ডের সব অক্ষর।
অবশ হাতেরা 
পঙ্গু শরীরের সামনেই পড়ে রয়।
স্বজাতির হাহাকার বা স্বদেশীর,
আমি চিনি মানুষ।
সংখ্যালঘু বলো বা শরনার্থী,
আমি দেখি মানুষ।
মানবতার মৌলবাদীতায় 
যদি আমায় ফাঁসি দাও
তবু ভালোবাসি মানুষ। 
যে শিশুরা শহীদ হলো
তারা কি মানুষ ছিলো?
নাকি নিরীহ প্রাণে, মানুষ হবার 
যোগ্যতা তাদের ছিলোনা।
একটু আঘাতে, ফোঁটা রক্তের কষ্ট
সহ্য করতে পারিনা,
অথচ রক্তের হোলি চলছে 
মানুষের রক্তে!!
হ্যাঁ মানুষ!
আমি মানুষ দেখি নির্যাতিত প্রাণে।
প্রতিদিন এই রক্ত-ইতিহাসে
যতোটা হৃদয়ক্ষরণ হয়,
তার চেয়ে বরং আমাকে,
আমার সব রক্তকে
একেবারে মৃত্যু দাও;
যদি তাতে রক্তের চাহিদা ক্ষান্ত হয়।
স্রষ্টার সৃষ্টিকে যে তুমি ভালোবাসনা,
সে তুমি শান্তির ধর্ম শেখনি সুচী।
টাইয়ের নট নাড়ানো আন্তর্জাতিকতা
তোমায় কি শেখাবে?
একটি, দুটি হাজারটি শিশুর 
লাশের উপর দাঁড়িয়ে যে আন্তর্জাতিকতা,
সত্যের সংজ্ঞায় এখন তার শান্তি কমিটি 
মানবতা বিলীন করে।
আমার একটি মাত্র প্রাণ, নিঃশর্তে
বলি দিতে চাই,
যদি তাতে জাতিসংঘের
শান্তি কমিটি প্রাণ পায়।
সুচী'র মগেরমুল্লুকের
অশুচী দাপটের কাছে
বিশ্ব বিবেক যখন নুয়ে থাকে,
মাহাকালের গহীন গোঙানী
আর্তনাদে কাঁদে 
হায় মুসলিম হায় মুসলিম।
পুড়ে যাওয়া গ্রামের শিখায়
যে চোখে হাসে প্রেতনৃত্য
ঈশ্বর তিলাওয়াত করবেন 
মানুষ হননের শাস্তি কতো তিক্ত।


Thursday, July 16, 2015

বিধুর বর্ষণ

                        বিধুর বর্ষণ

রহস্যপ্রিয়  বৃষ্টি
 চাঁদ ধুয়ে আবৃত্তি করে মোহময়ী জোছনার!
মন্ত্রমুগ্ধ তড়িৎ
 মোহ -মেঘের লাজ ভাঙ্গনের শব্দে চমকে দেয় অলিন্দঘর।

সম্মোহনী সমুদ্র শশির হাত ধরে
            নেশা ছড়ায় ফোয়ারার মদিরায়।
অস্থির জলরাশি ছুঁয়ে পবন
             আপন সত্ত্বা গড়ে তিথির চন্দ্রিমায়।

খোপায় বেলী পড়ে মোহিনী রাত ;
          প্রেমালাপে লাইটপোস্টের স্বপ্নীল আহবান।
গন্ধরাজের মাতাল ঘ্রাণে মিশে
      ষ্টির নিরলস ডাংগুলিতে মুখর পিচঢালা প্রাণ।

কামিনি জাগে নাগপ্রেম দর্শনে মোহের শিশিরে,
 হাসনা -হেনা রচে প্রস্ফুটিত প্রেম আবেগের শরীরে।


পদ্মকলি বুকের জলে ভালবাসা তোলে রুপোর কৌটায়,
দিঘীপ্রেম বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে পদ্মকথা ভিজিয়ে যায়।

চঞ্চল প্রকৃতি ছুৃঁয়ে উচ্ছল স্বপ্নে নেশাতুর বরষণ,
পরিচিত চারুতে মানবীপ্রেম করে আমন্ত্রণ।

পুরুষালী ঘ্রাণে উম্মাদ হয় শিহরিত বর্ষা
          মেঘের চিরকুট খুলে,
প্রথম স্পর্শ মনোহর শিল্প আঁকে শরীরের ভাঁজে
          অপরিচিত দন্ধ ভুলে।

স্পর্শের অস্থিরতায় সিঁদুরের রঙ্গে
         লাজে রাঙ্গে নন্দিনী,
মানষ প্রেমে বিধুর লগন
         উৎসর্গ করে মায়াবিনী।

বৃষ্টির চুমুতে ভেজে শিহরণ ; প্রেমান্ধ জোছনার।
কবিতার উষ্ণ ঠোঁটে আঁকে শব্দেরা সন্ধি ;সজীব উপমার।
       

Monday, July 13, 2015

                             প্রত্যয়
(ছোট গল্প)
--জেবুন্নেসা সিমী
আমানের মন ভালো নেই।পলকহীন তাকিয়ে আছে সপ্তর্ষির প্রশ্নে। কি জানতে চায় নতুন করে? আঁধারের গহবর গিলে নিচ্ছে রাতের কান্না।অশ্রুর বন্যায় ভিজে গেছে টি -শার্ট।পকেটভর্তি দুঃখ নিয়ে আগলে রাখছে আমানকে।
আজও শুনতে হল সেই অকাট্য সত্য। নিজের সাথে যুদ্ধে ক্লান্ত আমান।মনুষত্বের ভালবাসা গলা টিপে মারতে পারেনা বলে ছেড়ে যায়না সোহেল সাহেবের ঘর।আর মা? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাতা আমানের এই মা।
আজ রাতে খাবার টেবিলে আবার সেই সমস্যাটি। মা আমানকে মাছের মাথাটি যেই তুলে দিল অমনি আলিফ বলল -খাওয়াও ভালো করে।এতিমকে খাওয়ালে সওয়াব হবে। বলেই দু ' ভাই -বোন উপহাসের হাসিতে আমানের খিধে মিটিয়ে দিল। অনেক কিছু বলতে পারে আমান।কিন্তু এই মহান পুরুষকে ভালবাসে আমান। আমানের ঈমাণ এই বাবা। সোহেল সাহেব বিব্রত হয়ে ধমক দেয় -এসব কি আলিফ? আলিফ প্লেট ধাক্কা মেরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। 'কাল থেকে আমি এই জারযের সাথে খেতে বসবো না, আমার খাবার রুমে দিয়ে এসো ' মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে আলিফ। ভাইয়ের দেখাদেখি মীমও উঠে পড়ে। 'যত্তোসব! আপদটার জন্য জীবনটাই অতিষ্ঠ। ' মা ধমক দেয় -মীম! সোহেল সাহেব তার ওয়াইফের দিকে তাকায়। তারপর দুজনেই মাথা নিচু করে রাখে।আমানের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।বলতে ইচ্ছে করে -মনুষত্বের শিরোনামে তোমাদের নাম লিখাতে আমার বুকের রক্তই কেন বেছে নিলে? কিন্তু কেউ যেনো কণ্ঠরোধ করছে। চেয়ার ছেড়ে বলে, মা -বাবা তোমরা খেয়ে নাও। মা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বাবা যেন আরো অসহায়। বোবা প্রাণের আর্তিতে আমানের চোখ ভিজে যায়।আজ প্রথম নয়। পনের বছর ধরে এমন প্রতিদিন দহন আমানের আত্মায়। সেই সাইকেল বেলা থেকে আজ অব্দি আপন করে নিতে পারেনি আলিফ -মীম , আমানকে।
পরশু যখন খালা এসেছিল, মীমের অভিযোগ শুনতে শুনতে মা 'কে বাজে ভাবে অপমান করেছিল। চাচাদেরও চোখের বালি আমান। আমান দেখেছে মায়ের ভেজা চোখ। আমানের আজও মনে পড়ে প্রিয় সাইকেলটা কেমন করে ভেঙ্গে দিয়েছিল আলিফ। নোটগুলো কেমন করে নস্ট করে দিত মীম। চাচা তো বাবাকে সরাসরি বলে পথের শিশু আপন করতে গিয়ে নিজ রক্ত পঁচাবে নাকি? তোমরা আমানকে বেশি ভালবাসো -আলিফ /মীম সহ্য করতে পারেনা। বাচ্চাদের মানসিক রোগী করে ছাড়বে দেখছি।
আমান তখন জানতো না সে কে? সোহেলের মতো বাবা আর শালুকার মতো মা হাজার জন্ম সাধনা করলেও পাওয়া যায়না। আমানকে বুকে নেয়ার দুবছর পরে আলিফের জন্ম। তাই বাবা আমানকে বড় ছেলেই মানে।
কোনো অভাব রাখেনি আমানের। আমান সাইকেল চেয়েছিল শুনে আলিফও চেয়েছিল। বাবা বলেছিল 'এ মাসে আমানকে কিনে দিই।ওটা নিয়ে দু 'ভাই চালাও। সামনের মাসে আলিফকেও কিনে দিবো '। দাঁড়ানো ছিল প্রতিবেশী সাঈদা আন্টি। আন্টির কথাগুলো এখনও আমানের কানে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাঈদা আন্টি : এ কেমন কথা? যত্তোসব আদিখ্যেতা! আগে তো নিজের ছেলে। সবাই তো সব জানে। মায়া করে পালছেন, ভরন -পোষণ করছেন, এই তো বেশি। এতো নাটক দেখিয়ে লাভ কি বাপু? 'সেদিন থেকে আমান জানে তার পরিচয় ।
আমানের কানে কথাগুলো আজও বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু সেদিনের বিস্ফোরণ! টুইনটাওয়ার ধ্বংসের শব্দেও যেনো প্রাসাদের ভেতর জীবিত দাঁড়িয়ে আমান মৃত্যুর বিস্ফোরণে! 
  যদিও  বাবা ধমকে দিয়েছিলেন সাঈদা আন্টিকে, যদিও আমানের সাইকেল আগে এসেছিল তবু সেদিন থেকেই আমানের মৃত আত্মা কুড়িয়ে পথশিশু এক রঙ্গশালার অভিনয়ে। সেই পর থেকে আজ পর্যন্ত সবার মুখে শুনেছে এই কথা। আমান কখন নিজেকে মিটিয়ে দিতে পারতো!  কিন্তু বাবা /মায়ের মনুষত্বের সার্টিফিকেটে দাগ লাগতে দেবেনা বলেই মেনে নিচ্ছে কষ্টক্ষরণ। 
কিন্টার গার্ডেনের ভাল ছাত্র হয়েও এস,এস,সি রেজাল্ট হয়নি মনের মতন। এইচ,এস,সিও কোন রকম।শুধু মানুষরূপী ফেরেশতা দুটোর জন্যই জীবনটাকে বয়ে নিয়ে এগুচ্ছে আমান। প্রতিদিন প্রতিরাত মৃত্যুকুয়ার আতঙ্ক গিলে খায় আমানকে। সকাল হলে রাতের ভয়,  রাত হলে দিনের ভয়। আবার যে কখন সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনারা আঘাত করে  সময়ের দাওয়ায়। 
হঠাৎ মেঘের আড়ালে চলে গেল তারার আকুতি। বৃষ্টির ঝাপটায় আর দাঁড়াতে পারছেনা আমান কাঁচ টেনে ভিতরে চলে এলো।ঘুম আসছেনা। মোবাইল হাতে নিয়ে ডাটা অন করলো। অনলাইনে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।যদিও মাত্র একশোজনের পরিবার তবু মাত্র বারো জন অনলাইনে। কিন্তু কখনো তেমন কথা হয়নি এদের সাথে।সবার নীচে এক মেয়ে বন্ধুর নামের পাশে সবুজ বাতি। আশ্চর্য্য এতো রাতে মেয়েটি অনলাইনে? কৌতুহলবশত সেন্ড করে -হাই!  বাট নো রিপ্লাই। ভাবল হয়তো কারো সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত।বেশি জানেনা মেয়েটি সম্পর্কে।  ছবি দেখল। মন্দ না। তবে শ্যামলা।চোখ দুটো কিন্তু প্রাণে স্পন্দন দেয়ার মতো সুন্দর। কি জানি? চোখ হয়তো এঁকেছে। যাই হোক, পার্থক্য কি?  ছবিগুলো দেখছে আর মাঝে মাঝে স্টিকার সেন্ড করছে। এতো রাতে না ঘুমিয়ে অনলাইনে কি করছ? ।দশ মিনিট প্রায়। ধ্যাৎ!  বের হয়ে যাবে ভাবতেই  ছোট্ট একটা রিপ্লাই -কেনো,  আপনাকে বলব?  আমান - এমনি জানতে চাওয়া, ওকে বাই। ডাটা অফ করল।
একটা জব!  ছমাস ধরে অনেক ঘুরেছে। খুব দরকার।গতরাতে কিছু নিউজ দেখেছিল। কাগজপত্র ঘুচিয়ে বের হয়ে গেল। সারাদিনমান  ঘুরে ঘুরে অনেক  ক্লান্ত আমান। না কিচ্ছু হবেনা আমাকে দিয়ে শুধু সোহেল সাহের অন্ন ধ্বংসই হবে, নিজেকে তিরস্কার করে আমান। পরদিন আরো কয়েক জায়গায় ট্রাই করল।বেলা তিনটা, খাওয়া হয়নি।  এটাই শেষ। কাগজ দেখিয়ে দারোয়ানকে ঢুকতেই  সাহেবের রুমে ঢুকার আগেই মিষ্টি একটা স্বর -প্লিজ আগে এদিকে আসুন।  কাছে গিয়ে বিজ্ঞাপন কপি দেখিয়ে ডিটেইলস জানতে চাইল। 
:বসুন। দেখছি।
সামনের চেয়ারটিতে বসল। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অস্পষ্ট কিছু একটা বলছে। মেয়েটি কি আমার প্রতিবেশি?  নাতো! কোথায় যেন দেখেছে কিন্তু মেলাতে পারছেনা। মেয়েটিও দু 'বার তাকাল।
ফোন রেখে মেয়েটি বলল  -কাল আসুন। উঠে পড়ল। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হল। খেতে ইচ্ছে করছেনা অবেলায়। রুমে এসে ডাটা অন করতেই একটি মিষ্টি মুখ ভেসে উঠল।
:হাই। রিপ্লাই দিতে গিয়ে দেখে সেই মেয়েটি। মাথার বামপাশে বামহাতে চড় দিলো। কি হল?  সব জায়গায় একটাই মেয়ে কেনো? ভাল করে দেখল। না!  একই চেহারা। : কি ভাবছেন?  যেখানেি যাবেন আমি আর আমি। কাকতালীয় হোক বা তালের কাক হোক আমি আর আমি। ভালো লাগায় সিক্ত হয়ে তাড়াতাড়ি লিখল - অবেশেষে বুঝলাম, আসলে আপনি খুব অসুন্দর তো তাই একটু বিপদ ফিল করছিলাম।   আর রিপ্লাই নাই।রিপ্লাই খুঁজতে গিয়ে নিজের মেসেজটি চোখে পড়ল। এ কি! সর্বনাশ!  সুন্দরের সামনে 'অ ' আসলো কোত্থেকে? আর তখনি রিপ্লাইটা আসলো। :তাই?  সত্য বলার সাহস সবার থাকেনা। আর আমাকে অসুন্দর লাগার কারণ কি, বসিয়ে রেখেছিলেম বলে?  যাক, এই কথাটি কিন্তু আজ প্রথম জানলাম। আমান :সরি। আমি লিখতে চেয়েছিলাম, খুব সুন্দর। কিন্তু আমারআগেই এই 'অ ' বেটা কোত্থেকে চলে এলো, খেয়াল করিনি। : বুঝতে পারছি। কাল আসছেন তো?   আমান : চাকরিটা আমার খুব বেশি দরকার। আমার বাঁচার অবলম্বনের জন্য। : কিন্তু এই এতো কম সেলারি!  পোসাবে?  আমান : আপাতত হবে। তবে ভীষণ দরকার।
আমানের চাকরিটা হয়ে গেল। সারাদিন অনেক কাজ শেষে বাড়ি ফিরে বাবাকে বলল। তোর ভালো লাগলে আমার কিছুই বলার নেই -বলল বাবা। আজ রাতটাকে ভালো লাগছে।  অশ্রুরা অবাধ্য হয়ে বান ডাকছেনা।ভাল লাগার এই ব্যস্ততা অদ্ভুত। ভাবতে ভাবতেই ডাটা অন করলো।আমান :নাম বলবেনা? :শ্রেয়া। আমান : বেশ মিষ্টি তো। ছোট ছোট শেয়ার,  জানার কৌতুহল ; মাসখানেকের মধ্যেই ভালো বন্ধু দুজন।
     ছয়টা প্রায়। আমান ফ্রেশ হয়ে মোবাইলে এফ বিতে লগইন করতেই দেখে শ্রেয়ার অনেক সুন্দর ছবি প্রথমেই শো করছে।'ইউনিজয় ' কি -বোর্ড পাল্টে ইংরেজিতে দ্রুত 'Nic ' কমেন্ট করে ইনবক্সে ছুটল। :হ্যালো।  : কইইইইইইই? :এইইইইই!  :কি হল? : কথা বল!  : তুমি আসলেই ______।  শ্রেয়া :কি?  নীচ? আমান :কি যা তা বকছ?  কি হয়েছে ?  শ্রেয়া : তুমিই তো কমেন্টে লিখলে!  আমান দ্রুত ছবিতে গিয়ে দেখে 'নীচ 'লেখা। তাড়াতাড়ি এডিট করল। মনে পড়ল ;মেসেজ লিখতে গিয়ে কি -বোর্ড চেইঞ্জ করতে হয়েছিল।  কারণ ইউনিজয় ও ইংরেজির মাঝে যে কি -বোর্ড সেটি ইংরেজি বর্ণমালা শো করলেও কিছু লিখতে গেলে বাংলায় লেখা হয়ে যায়। দুঃখ প্রকাশ করল। কানে হাত দিয়ে ছবি সেন্ড করল ইনবক্সে। কিন্তু রাগ ভাঙ্গাতে পারলনা।
       পরেরদিন অফিসে সামনে এসে দাঁড়ালেও শ্রেয়া পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমানের ভাল লাগছেনা। মেজাজ না কষ্ট নাকি অভিমান ঠিক বুঝতে পারছেনা। অপরিচিত অনুভূতি।  ইনবক্সে মেসেজ করর।
আমান : প্লিজ একটু কথা বলো। আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি।  তুমি কি জানো - আমার অনেক কষ্ট!  তুমি শুনবে? শ্রেয়া :বলো। সুযোগ পেয়ে আমান ছোট থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব কষ্টগুলোর  ভার ইনবক্সে  ঢেলে দিয়ে হালকা হয়ে গেল।এতো হালকা অনুভব ;যেনো লিফটে চড়ে স্বপ্নীল দেশে বেড়ানো।। 
    শ্রেয়া সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল - তোমাকেই সমাধান করতে হবে।প্রত্যয়ী হতে হবে। সাহসিকতা,  কর্তব্যজ্ঞান আর ভালবাসা দিয়েই জয় করতে হবে পৃথিবী। আমান : বুঝলাম না।  শ্রেয়া : প্রথম বেতনে তুমি সবার জন্য উপহার কিনবে।  আমান : কিন্তু  ওরা ফেলে দেবে।। শ্রেয়া :দিকনা। চেষ্টা করতে দোষ কি? তোমার মা /বাবার জন্য যা কিনবে, তার চেয়েও ভাল কিনবে  আলিফ /মীম এর জন্য। আর হ্যা। কাল অফিস থেকে ফিরেই ভাইয়ের কাছ বলবে ;ভাই আমি খুব বিপদে।তুমিই পারো আমায় সাহায্য  করতে পারো। বাবার জন্য কি কিনবে, মার জন্য কি কিনবে, বোন কি বেশি পছন্দ করে? এসব কথা তারকাছে প্রার্থনার সুরে জেনে নেবে। আমান :কিন্তু !  শ্রেয়া :কোন কিন্তু নয়। আমার দরশন মেনে দেখো একবার।
   আমান আজ প্রথম প্রথমবার ভাইয়ের রুমে গেলো। আলিফ রেগে গিয়ে -তুমি এখানে কেনো? বের হো।বের হও আমার রুম থেকে। আমান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলল -আমি একটা  বিপদে পড়েছি, তাআ তোমার কাছে এসেছিলাম। আলিফ : ওহ!  টাকা লাগবে? তা এখন মদ -গাঁজা /সিগারেট ধরেছো নাকি? তাতো হবেই। কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না। আমান :না ভাই! প্লিজ আমাকে একটা উপায় বলো।আলিফ : আচ্ছা বলো।
আমান আওড়ায় শ্রেয়ার শেখানো বুলি। আলিফ একটু বিব্রত হলো।তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বললো -তোমার জিনিষ কেউ নেবেনা। আমান :তুমি চাইলেই নেবে। প্লিজ আমায় একটু সুযোগ   দাও ভাই। বলেই হাত ধরলো। আলিফ হাত ছাড়াতে চাইল। হাত ছাড়ানোর ধাক্কায় আমান পড়ে গেলো। টি -টেবলের কোণায় লেগে হাত কেটে গেছে।দাঁড়াতে চেষ্টা করল। আলিফ হাত বাড়ালো। তবে রাগ -ভাব দেখিয়ে বলল আমি শেষবার সাহায্য করবো।আর কিন্তু  কখনো আসবেনা আমার কাছে। আমান :ঠিক আছে। কিন্তু তোমার  পছন্দ করে কিনতে হবে। আলিফ মেনে নিলো। দু 'দিন পর বেতন তুলেই ভাইকে কল দিয়ে নিয়ে গেলো।
    দু 'ভাই যখন একসাথে প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢুকছে,  বাবা দেখে তো চা 'তে চুমুক দিতে ভুলে গেছেন।মাও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। আলিফ প্যাকেট রেখে চলে যেতে উদ্যত হলে আমান তার হাত ধরে বলল -ভাই,  কোনটা কি? কার? আমার তো মনেই নেই। প্লিজ -হেলপ!  আলিফ :ওকে। আলিফ শপিং ব্যাগ বাবার হাতে দিতে দিতে বলল - নাও বড় ভাইয়ের প্রথম আয়ের শুভেচ্ছা। 
বাবা কেঁদে দিলো। দু 'হাতে জড়িয়ে ধরল দুজনকে। আনন্দাশ্রু ভেসে গেলো পাঁচটি প্রাণে।  
আমান খুশির খবর টা শ্রেয়াকে জানানোর জন্য  ডাটা অন করল।  এসেই দেখে শ্রেয়ার মেসেজ। শ্রেয়া : বন্ধু আটটায় আমার বাড়ি আসো। আমার আজ এনগেইজমেন্ট। আমাদের সম্পর্ক ছিল বহুদিনের।কিন্তু প্রায় ছমাস ধরে সমস্যা চলছিল। গতসপ্তাহে সব ঠিক হয়ে যায়। তোমার খুশির ছন্দে আমি রং দিলাম বন্ধু,  আমার আনন্দে তুমি থাকবেনা?  সবাইকে  নিয়ে এসো কিন্তু।   
সাতটা।  শ্রেয়ার বাড়িতে মা, আলিফ,  আমান আর মীম এসেছে। শ্রেয়ার বর বেশ হ্যান্ডসাম।  আমানের
মন খুব ভালো আজ। মেসেজ পাওয়ার পর অনেক ভেবেছে আমান -শ্রেয়াকে কি ভালবাসে সে? হ্যা। বাসে। কিন্তু এখানে অন্যরকম ভালবাসা।  বন্ধু!  অভিভাবক!
শ্রেয়া জয় করেছে তার ভালবাসার  কে। আর আমান জয়  জয়  করেছে তার ভালবাসার ঘরকে। 
সবার আনন্দের হাসিতে দুজন হঠাৎ একসাথে দাঁড়ায়।  সবাই অবাক হয়ে তাকায়।
   শ্রেয়া : কি বুঝলে আমান?
    আমান : ভালবাসা দিয়েও পৃথিবী জয় করা যায়, যদি একনিষ্ট হয়।
                                                       ____________@@@_________  

Saturday, July 11, 2015

              নীলিমার শাপ

এমন করে চলে গেলি?
জানতাম তো যাবি!
কিন্তু এতই তড়িঘড়ি?
যারে এতো ভালবাসি
সে মনের ঘর ছেড়ে পালাবে!
বল কি করে ভাবি?

তোর কিছু নেই দোষ
এ আমার শাপ!
তবু ভুল যদি মোর কিছু হয়
করে দিস মাফ।

রং ছড়ালি নিজের মতন
তাইতো আজ মুছে দিলি সব।
আমার যা ছিলো ভালবাসায়
তোর ভাললাগায় করে নিলি শব।

ভালো করেছিস চলে গিয়েছিস
পুরোনো ফেকচারে আমার,
ক্ষণে ক্ষণে বাম লাগাতে
হবেনা যে তোকে আর।

দায়ী তো তুই নারে
খোদা স্বয়ং করেন আমার টেইক কেয়ার,
তাইতো ভালবাসতে আমায়
কাউকেই দেননা তিনি বেশি আর।

ফুরালে তোর রঙ্গ মেলা,
একবার আসিস কিন্তু কানামাছি খেলায়।
হারিয়ে যাবার  শোধ নেবো
সুরেলা সেই জোছনার কবিতায়।

এ কোন কবিতা নয়
নয়  বুদ্ধিদীপ্ত শব্দখেলা।
এ তো শুধু তোর -আমার
মিতালী যাপিত  স্মৃতির ভেলা।


Tuesday, April 21, 2015

রবি স্বপন



রবি স্বপন
////////////////////////
সখি, আমার লাবণ্যকে দেখেছো?
তোমার সরলতায় গড়েছিলেম যারে?
সখি, আমার মানসীকে পড়েছো?
কী বলো কবি?
কীভাবে শতবর্ষ আগে
আঁকলে আমার ছবি?
তুমি কী ভুলেছো সখি,
ইছামতির দিন?
তুমি কী দেখোনি সখি,
কেমন দুর্দান্ত রবি ক্লান্তিহীন?
কবি স্বপনেই যদি এলে,
একটা গান রচে যাও
প্রিয়ের পেমানলে
পৃথিবী যাই বলুক,
তোমার তরে রচেছি পিয়ে হিয়ার কথা।
যুগে যুগে তুমি প্রিয়া
মুছবে প্রিয়ের মর্মব্যথা
যুগে যুগে সখী তুমি চঞ্চলা -সরলা,
মোহিনীরূপে সখীরে
কাব্যে রাখি দিনমান প্রাঞ্জলা
মায়াময় কনকদর্পনে বিম্ববতীর কথা
রচেছি রূপকে তোমার।
সুবর্ণ মুকুরে করেছি
শুভদৃষ্টি প্রেমী আশার
তবে কী সেদিন কবি
আমার রাঙ্গামাটিরেও জানতে?
আজ দ্বিধা নেই তোমার প্রথম বনফুল
সার্থক বলে মানতে!
স্বপন শেষে তো চলে যাবে কবি!
যেটুকু প্রিয়ালাপ, বর্তমানের জোয়ারে
মুছে যাবে সবি
সখি ভাবো কেনো!
আমি যে তোমার হিয়ায়!
যতই লিখবে,
মোহিত হবে রবি প্রেমের মায়ায়